অনেককাল আগের কথা। তখন গাঁও গেরাম কেন ছোট বাজারেও ডাক্তার মিলানো কষ্ট হতো। এমনি সময়ে কোন এক গ্রামে এক হাতুড়ে ডাক্তারের আবির্ভাব হলো। হাটে-বাজারে লিফলেট সেঁটে সে ডাক্তার পসার জমাতে থাকলেন। রোগী আসতে থাকল দু’চারজন করে। তো, একদিন ক’জন রোগী এসে তার ডাক্তারী করার ঘরের দাওয়ায় বসে আছে। কেউবা লাল মিকশ্চারের শিশি নিয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে। এমন সময় এক রোগী বেরিয়ে এলো। তার হাতের আঙ্গুলে ইনফেকশন হয়েছিল। ডাক্তার সে অংশ কেটে ফেলে দিয়েছে। তবে ব্যান্ডেজ ভাল হয়নি। রক্ত থামছে না।হাতুড়ে ডাক্তার বলেছেন, বাড়ি ফেরার সময় রোগী যেন দূর্বাঘাস তুলে নিয়ে যান। সেই ঘাস শিল-নোড়ায় বেটে লাগিয়ে দিলেই রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে। তো, সেই রোগী রক্তাক্ত আঙ্গুল নিয়ে ডাক্তারের ঘর থেকে বের হবার পরই বাইরে অপেক্ষমাণ এক রোগী হঠাৎ উঠে পড়ি কি মরি করে দৌড়ে ডাক্তারের বাড়ি থেকে পালাতে থাকে।অন্য রোগীরা বলে : ভাই পালান কেন?সে তখন আঙ্গুল কাটা রোগীকে দেখিয়ে বলে : আমার বহুমূত্র রোগ। পেশাব পরীক্ষার জন্য এসেছিলাম, ডাক্তার যদি আমার হেইডা কাইটা ফালায়।
এক দেশের এক নবাব একদিন খেতে বসেছেন। পাখির মাংস দিয়ে ভাত খাবেন। রান্না বেশ ভাল হয়েছে। প্রথমে তিনি একখানা রান খেলেন, দারুণ স্বাদ। তখন আর একখানা রানও পাতে তুলে দিতে বললেন। কিন্তু রান্না করার সময় মাংসের চমৎকার ঘ্রাণে বাবুর্চি আর লোভ সামলাতে না পেরে একখানা রান তখনই খেয়ে ফেলেছে। তাই ভয়ে, আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে বাবুর্চি বলে : হুজুর ওটাতো বক পাখি ছিল, বক পাখির একখানা পা থাকে। তাই একখানা পা-ই রান্না করেছি। নবাব সাহেব বাবুর্চির কথা শুনে রেগে লাল হয়ে গেলেন।বললেনঃ ছোঁচা, তুই কোন সাহসে একখানা রান খেয়ে ফেলে এখন মিথ্যে কথা বলছিস? বাবুর্চি : না হুজুর, আমি এক তিলও মিথ্যে বলিনি। বক বড়ো হলে তার একখানা পা-ই থাকে। আমার সঙ্গে বিলের ধারে চলুন, দেখবেন, বক সব এক পায়ে দাঁড়িয়ে। নবাব, একটু মুচকি হেসে খাওয়া শেষ করলেন। তারপর, পাইক বরকন্দাজসহ বাবুর্চিকে নিয়ে বিলের দিকে চললেন। বিলের ধারে যেতেই বাবুর্চি চিৎকার দিয়ে বলল : হুজুর, ওই দেখুন ডানদিকে ঝোপের ছায়ায় একটা একপেয়ে বক।নবাব হাসলেন। তবে কোন শব্দ করলেন না। তারপর জোরে দু’তিনবার হাততালি দিলেন। ঘাসের ঝোপের ছায়ায় আরামে ঝিমুতে থাকা বকটি হাততালির শব্দে সচকিত হয়ে অনেক মানুষ দেখে চমকে গিয়ে উড়াল দিল। আর তখনই তার দু’খানা পা বেরিয়ে পড়লো।নবাব এবার অট্টহাসি দিয়ে বললেন : কি হে বাবুর্চি, বকের তো দেখি দু’খানাই পা!বাবুর্চি : হুজুর, আপনি হাততালি দেয়াতেই দু’খানা পা বেরুলো! ইস! সেদিন খাবার সময় কেন যে হাততালি দিলেন না, হুজুর! দিলেই দু’খানা রান পাওয়া যেত।নবাব বেশ মজা পাচ্ছিলেন। পরিস্থিতিটা তিনি উপভোগও করছিলেন। তাই হাসতে হাসতে বললেন : আমি কি জানতাম, যে হাততালি দিলেই দুখানা রান পাব? জানলে কি আর হাততালি না দিতাম। কিন্তু বাবুর্চি, আমি না হয় বোকার মত হাততালি দেইনি তুমি তো দিতে পারতে। তাহলে তো আমি দু’খানা রানই খেতে পারতাম!বাবুর্চিঃ হুজুর, আমার কি অতটুকু বুদ্ধিও নেই! হাততালি দিলে পাখিটা উড়ে যেতো না। তবু তো হুজুরকে একখানা রান খাওয়াতে পেরেছি, উড়ে গেলে তো তাও খাওয়াতে পারতাম না। আমার জন্য সে যে বড়ো কষ্টের ব্যাপার হতো! আর আপনাকে মাংস ছাড়া খানা আমি কোন মুখে খাওয়াতাম?বাবুর্চির একটা রান খেয়ে ফেলার ব্যাপারটা নবাব বুঝেছিলেন। মনে মনে ভীষণ ক্রুদ্ধও হয়েছিলেন। কিন্তু বাবুর্চির প্রত্যুৎপন্নমতিত্বে তিনি খুশি হয়ে বাবুর্চিকে শুধু মাপই করলেন না—পুরস্কৃতও করলেন।
1 Comments
Ha ha ha
ReplyDelete